বিমান দুর্ঘটনায় ওবামা ও বাইডেন প্রশাসনের ‘ডাইভার্সিটি হায়ার’ নীতিকে দায়ী করেছেন ট্রাম্প
- By Jamini Roy --
- 31 January, 2025
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনের রিগান ন্যাশনাল এয়ারপোর্টের কাছে যাত্রীবাহী বিমান ও মার্কিন সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারের ভয়াবহ সংঘর্ষে ৬৭ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনাকে দেশটির গত দুই দশকের সবচেয়ে মারাত্মক বিমান দুর্ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দুর্ঘটনার পর হোয়াইট হাউজে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং করেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্রিফিংয়ে তিনি এ দুর্ঘটনার জন্য ওবামা ও বাইডেন প্রশাসনের 'ডাইভার্সিটি হায়ার' নীতিকে দায়ী করেছেন।
স্থানীয় সময় বুধবার (২৯ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে ওয়াশিংটনের রিগান ন্যাশনাল এয়ারপোর্টের রানওয়ে ৩৩-এর কাছে যাত্রীবাহী বিমানের সঙ্গে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারের ধাক্কা লাগে।
বিমানটিতে মোট ৬০ জন যাত্রী ও ৪ জন ক্রু সদস্য ছিলেন। অন্যদিকে, হেলিকপ্টারটিতে ছিলেন ৩ জন মার্কিন সৈন্য। সংঘর্ষের ফলে উভয় উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে আগুন ধরে যায়, মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ধ্বংসস্তূপ।
দুর্ঘটনার কারণ এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তবে মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) ও জাতীয় পরিবহন নিরাপত্তা বোর্ড (এনটিএসবি) তদন্ত শুরু করেছে।
দুর্ঘটনার পরপরই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, এ ধরনের ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পেছনে ওবামা ও বাইডেন প্রশাসনের ‘ডাইভার্সিটি হায়ার’ নীতি দায়ী।
তিনি বলেন, “ওবামা ও বাইডেনের সময় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ও এভিয়েশন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য (ডাইভার্সিটি) নীতির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসব লোক সবসময় যোগ্য ছিলেন না। এই কারণেই আজ নিরাপত্তার মান এতটা নেমে গেছে।”
ট্রাম্প আরও বলেন, “আমি সবসময় নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিই। কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা রাজনৈতিক নীতি সামনে রেখে বৈচিত্র্যকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এর ফলে এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিতে অনভিজ্ঞদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যার পরিণতিতেই আজ এত বড় দুর্ঘটনা।”
তিনি দাবি করেন, বর্তমান প্রশাসনের অধীনে নিয়োগকৃত এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা যথেষ্ট দক্ষ নন, যা এ ধরনের বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হোয়াইট হাউজের ব্রিফিংয়ের শুরুতেই ট্রাম্প নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
তিনি জানান, তিনি দ্রুত ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক হিসেবে ক্রিস রোচেলোকে নিয়োগ দিচ্ছেন, যিনি এভিয়েশন নিরাপত্তা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।
এ দুর্ঘটনাকে মার্কিন ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০০১ সালের পর এটাই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রাণঘাতী বিমান দুর্ঘটনা।
মার্কিন ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (এনটিএসবি) বলছে, বিমানটির ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার ও ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করা হয়েছে। এতে দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।
ট্রাম্পের বক্তব্যের পর ডেমোক্র্যাট শিবির থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। বাইডেন প্রশাসনের এক মুখপাত্র বলেন, “এটি একটি ভয়াবহ ট্র্যাজেডি। এখন তদন্তের ফলাফলের অপেক্ষা করা উচিত, কিন্তু ট্রাম্প এই মুহূর্তেও রাজনৈতিক বিভেদ সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন।”
ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, ট্রাম্পের মন্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং তিনি রাজনীতিকে সামনে রেখে দুর্ঘটনাকে কাজে লাগাচ্ছেন।
এই দুর্ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রে এভিয়েশন নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর নতুন করে আলোকপাত করা হচ্ছে।
এফএএ ও এনটিএসবি বলছে, তারা এই দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল, পাইলট নিয়োগ এবং সামরিক ও বেসামরিক উড়োজাহাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই দুর্ঘটনা এভিয়েশন শিল্পের নিয়োগ ও পরিচালনার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের কারণ হতে পারে।